ইংগেজমেন্ট রিং খুলে ফেললে কি বিয়ে ভেঙে যাবে? ইসলাম কী বলে?
আজকাল অনেকেই ইংগেজমেন্ট বা বাগদানকে বিয়ের প্রথম ধাপ হিসেবে মনে করেন। অনেক পরিবারে এই পর্বটি অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণ হয়—আংটি পরানো হয়, উপহার দেওয়া-নেওয়া হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি শেয়ার করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যদি কোনো কারণে একজন ব্যক্তি তার আংটি খুলে ফেলে, বা সম্পর্কটি ভেঙে যায়, তাহলে কি এটা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো বড় সমস্যা? বা এতে কি বিয়েটা “ভেঙে যায়”? চলুন বিষয়টি ইসলামি আলোকে পরিষ্কারভাবে বুঝে নেওয়া যাক।
ইংগেজমেন্ট বা বাগদান: ইসলাম কী বলে?
ইংগেজমেন্ট হচ্ছে একটি সামাজিক রীতি, যা ইসলামে অনুমোদিত কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়। এটি মূলত দুই পক্ষের মধ্যে ভবিষ্যতে বিয়ের একটি প্রতিশ্রুতি মাত্র। ইসলামে একে ‘খিতবাহ’ (خِطْبَة) বলা হয়। হাদীস অনুযায়ী, খিতবাহ বৈধ, তবে এর পরও যদি কোনো পক্ষ সম্পর্ক ভেঙে দিতে চায়, তাহলে তাতে শরিয়ত অনুযায়ী কোনো গোনাহ হয় না—যতক্ষণ না অপর পক্ষকে অন্যায়ভাবে অপমান করা হয়।
দাম্পত্য জীবনে সুখী থাকার উপায়: সম্পর্কের বন্ধন মজবুত করুন
ইসলামে সাতটি অভ্যাস ত্যাগ করলে সারা জীবন চেহারা সুন্দর ও যৌবন ঠিক থাকবে
✅ "এনগেজমেন্ট রিং খুলে ফেললে কি ইসলামically গুনাহ হবে? জেনে নিন বিয়ের আগে কী করলে ভুল নয়!
আংটি পরানো: ইসলাম কি বলে?
আংটি পরানো বা খুলে ফেলা ইসলামে আবশ্যক নয়। এটি মধ্যপ্রাচ্য বা ভারতীয় উপমহাদেশের একটি সাংস্কৃতিক রীতি মাত্র। হাদীস বা কুরআনে আংটি পরানোর মাধ্যমে বিয়ে ঠিক করার কোনো নিদর্শন নেই। নবী মুহাম্মদ (সা.) নিজেও বিয়ের সময় কোনো আংটি পরানো বা দেওয়া-নেওয়ার প্রথা পালন করেননি।
তবে পুরুষদের জন্য সোনার আংটি হারাম। রাসুল (সা.) স্পষ্টভাবে বলেন,
“সোনা পুরুষদের জন্য হারাম এবং নারীদের জন্য হালাল।” (আবু দাউদ)
তাই যদি আংটি হয় রূপার বা ধাতব, তাহলে তা পরা জায়েজ—তবে সেটা বিয়ে বা সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে বাধ্যতামূলক নয়।
আংটি খুলে ফেললে কি বিয়ে ভেঙে যায়?
না, আংটি খুলে ফেললে বিয়ে ভাঙে না। কারণ বিয়ে এখনো হয়নি।
ইসলামে বিয়ে (নিকাহ) সম্পাদনের জন্য কিছু মৌলিক শর্ত রয়েছে:
-
উভয় পক্ষের সম্মতি
-
পাত্রীর অভিভাবকের অনুমতি (ওয়ালি)
-
দুইজন সাক্ষী
-
মোহর (মাহর) নির্ধারণ
-
ইজাব-কবুল (প্রস্তাব ও গ্রহণ)
এই শর্তগুলো পূরণ না হলে বিয়ে সম্পন্ন হয় না। কাজেই আংটি পরানো বা খোলা বিয়ের বৈধতার কোনো শর্তই নয়। কেউ যদি আংটি খুলে ফেলে বা বিয়েতে মত বদলায়, সেটা দুঃখজনক হতে পারে—কিন্তু ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে এতে কোনো বৈধ বিবাহ বন্ধন ভাঙে না।
আংটি খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত ইসলামি মূল্যবোধে কেমন?
যদি কোনো পক্ষ যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে আংটি খুলে ফেলে বা সম্পর্ক ভেঙে দেয়—যেমন দ্বীনদারিতে অসামঞ্জস্য, পারিবারিক সমস্যা, চরিত্রগত সন্দেহ—তাহলে তা শরিয়তসম্মত। তবে যদি কারও মানহানি, অহংকার বা তুচ্ছ বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে এতে নৈতিক বিচারে প্রশ্ন থাকতে পারে।
তবে ইসলাম সবসময় এমন পরিস্থিতিতে শান্তি, পরস্পরের সম্মান এবং দোআর মাধ্যমে হেদায়াত চাওয়ার উপদেশ দেয়। হঠাৎ রাগ, গুজব বা সামাজিক চাপে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে, ইস্তিখারা পড়া এবং অভিভাবকের পরামর্শ নেওয়া উত্তম।
ইংগেজমেন্ট বা আংটি পরানো কোনো ইসলামি বিধান নয়, বরং সামাজিক রীতি মাত্র। সুতরাং আংটি খুলে ফেললে বিয়ে ভেঙে যায়—এমন ধারণা ইসলামে নেই। বিয়ে হলো একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি যা নির্দিষ্ট নিয়মে সম্পন্ন হয়। আংটি খুলে ফেলার মাধ্যমে কারও প্রতি অন্যায় করা না হলে এতে গোনাহ নেই।
আমাদের উচিত এই সামাজিক রীতিগুলোকে শরিয়তের আলোকে বিচার করে দেখা এবং ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধৈর্য ও জ্ঞান প্রয়োগ করা।