ব্রেস্ট ক্যান্সার কেন হয় এবং কারণ, লক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

 ব্রেস্ট ক্যান্সার কেন হয় এবং কারণ, লক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা 

ব্রেস্ট ক্যান্সারের কারণ

ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সারের সুনির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কারণ রয়েছে, যা এই রোগের সম্ভাবনা বাড়ায়। এগুলো হলো:

  1. জেনেটিক কারণ (বংশগত):

    • পরিবারে যদি কারও স্তন ক্যান্সার হয়ে থাকে, তবে এই রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
    • BRCA1 এবং BRCA2 নামক জিনে মিউটেশন থাকলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।
  2. হরমোনজনিত পরিবর্তন:

    • দীর্ঘ সময় ধরে এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের উচ্চমাত্রা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
    • মাসিক দ্রুত শুরু (১২ বছরের আগে) এবং মেনোপজ দেরিতে হওয়া।
  3. বয়স:

    • বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে, বিশেষত ৫০ বছরের পর।
  4. জীবনধারাগত কারণ:

    • উচ্চ ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া।
    • শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকা।
    • ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস।
  5. প্রথম সন্তান জন্মদানে বিলম্ব:

    • প্রথম সন্তান দেরিতে হলে বা সন্তান না হলে ঝুঁকি বেশি।
  6. বাইরের তেজস্ক্রিয় বিকিরণ:

    • রেডিয়েশনের সংস্পর্শে আসা।
  7. স্তনের ঘন টিস্যু:

    • স্তনের টিস্যু ঘন হলে ক্যান্সার শনাক্ত করা কঠিন এবং ঝুঁকি বেশি।

বয়ঃসন্ধির সময় মেয়েদের মধ্যে যে পরিবর্তন ঘটে

অবিবাহিত মেয়ের স্তন ক্যান্সারের কারণ

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের ১০টি উপায় হল

স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ

  • স্তনে চাকা বা গুটি অনুভব করা।
  • স্তনের আকার বা আকারের পরিবর্তন।
  • স্তনের চামড়া টানটান হওয়া বা ডিম্পল তৈরি হওয়া।
  • নিপল থেকে অস্বাভাবিক স্রাব বা রক্তপাত।
  • স্তনে বা বাহুতে ব্যথা।
  • বাহুর নীচে বা ঘাড়ে লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া।

করণীয়
smart living hub

১. সচেতনতা বৃদ্ধি করা:
  • স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা এবং স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে জানুন।
২. নিজে নিজে পরীক্ষা (Self-Examination):
  • মাসে একবার নিজে নিজে স্তনের পরীক্ষা করুন।
  • মেনোপজের আগে মাসিকের শেষ দিনে বা মেনোপজের পর যেকোনো নির্দিষ্ট দিনে করুন।
৩. চিকিৎসকের পরামর্শে স্ক্রিনিং:
  • ৪০ বছর বয়সের পর নিয়মিত মেমোগ্রাম করানো উচিত।
  • ঝুঁকি বেশি থাকলে চিকিৎসকের নির্দেশে কম বয়সেও স্ক্রিনিং করা যেতে পারে।
৪. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন:
  • সুষম খাবার: প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল, এবং কম চর্বিযুক্ত খাবার খান।
  • ব্যায়াম: নিয়মিত হালকা থেকে মাঝারি ব্যায়াম করুন।
  • ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করুন।

মেয়েদের টেস্টোস্টেরন হরমোন বেড়ে গেলে কি হয়

বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের ৭টি পরিবর্তন

মেয়েদের যেসব ভুলের কারণে হচ্ছে স্তন ক্যান্সার

৫. ঝুঁকি কমানোর চিকিৎসা:
  • যাদের পরিবারে স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস রয়েছে, তাদের জন্য প্রতিরোধক ওষুধ বা জিন থেরাপি প্রযোজ্য হতে পারে।
৬. মানসিক স্বাস্থ্য:
  • রোগ শনাক্ত হলে হতাশা এড়াতে মানসিক সমর্থন প্রয়োজন।
  • পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে নিজের মনের কথা শেয়ার করুন।
৭. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
  • স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়, যা চিকিৎসাকে আরও কার্যকর করে।

চিকিৎসার পদ্ধতি
smart living hub

১. সার্জারি:

  • টিউমার অপসারণের জন্য সার্জারি করা হয়।
  • লুমপেকটমি (আংশিক অপসারণ) বা ম্যাসটেকটমি (পূর্ণ অপসারণ) করা হতে পারে।

২. রেডিওথেরাপি:

  • রেডিয়েশন ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়।
  1. কেমোথেরাপি:

    • ওষুধের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়।
  2. ইমিউনোথেরাপি এবং টার্গেটেড থেরাপি:

    • শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা নির্দিষ্ট প্রোটিনের ওপর কাজ করে ক্যান্সার চিকিৎসা করা হয়।

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ ও প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা সম্ভব হলে এটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। সচেতনতা, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং নিয়মিত স্ক্রিনিং স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। তাই স্বাস্থ্য সম্পর্কে সবসময় যত্নবান এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে থাকুন।

নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষায় করণীয়

নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য সমস্যা ও সমাধান

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন