কুমিল্লা জেলার ঐতিহাসিক ২টি স্থান সম্পর্কে জানা আছে আপনার? #cumilla #কুমিল্লা

   কুমিল্লা জেলার ঐতিহাসিক ২টি স্থান সম্পর্কে জানা আছেকুমিল্লার বৌদ্ধ বিহার - shajgoj.com

বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত একটি মহানগর হচ্ছে কুমিল্লা। ঢাকা ও চট্রগ্রামের পর কুমিল্লাকে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর বলা হয়। খাদি কাপড় ও রসমলাইয়ের জন্য সারা বিশ্বে বিখ্যাত এই শহরটি। শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে ভরপুর কুমিল্লা জেলায় বেশকিছু বিখ্যাত ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানও রয়েছে। ভ্রমণ পিপাসু এবং ঐতিহ্য প্রেমীদের জন্য খুবই আকর্ষনীয় শহর কুমিল্লা। বৃহত্তম এ শহরটিতে রয়েছে হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য এবং তখনকার হাজারো ঐতিহাসিক নিদর্শন। আজকে আমরা গল্প করবো প্রাচীন এই শহরের দর্শনীয় দুইটি স্থান নিয়ে। 

কুমিল্লা জেলার ঐতিহাসিক স্থান পরিচিতি;

  

কুমিল্লা জেলা চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত একটি জেলা যার আয়তন- ৩০৮৫.১৭ বর্গ কি.মি.। এর উত্তরে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ও নারায়ণগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে নোয়াখালী ও ফেনী জেলা, পশ্চিমে মুন্সিগঞ্জ ও চাঁদপুর জেলা, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। কুমিল্লা জেলার হাজারো ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল ‘গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড’! উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এই সড়ক কুমিল্লা শহরের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে। বর্তমানে, বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন মহাসড়ক ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক কুমিল্লার পাশ দিয়েই অতিক্রম করেছে। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য কুমিল্লায় রয়েছে হাজারো দর্শনীয় স্থান। এমন দশর্নীয় এবং ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি স্থান হল- “আনন্দ বিহার” এবং “ময়নামতি জাদুঘর”। তো চলুন জেনে নিই এই দু’টি স্থান সম্পর্কে।

আরো পড়ুন

আনন্দ বিহার; কুমিল্লা জেলার সবচেয়ে ইতিহাসবহুল স্থান কোটবাড়ির ময়নামতিতে অবস্থিত বাংলাদেশের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্য আনন্দ বিহার। অন্যান্য প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে সর্ববৃহত এই মন্দির উপমহাদেশের শেষ বোদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। বিশাল জায়গার মাঝেই রয়েছে অসম্ভব সুন্দর কেন্দ্রীয় মন্দির ও একটি দিঘি। মন্দিরটি ঘিরে রয়েছে সন্যাসীদের কক্ষ। রয়েছে বিহার হতে উদ্ধারকৃত বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন,যেমন- ৬৩টি রৌপ্য মুদ্রা,ব্রোঞ্জ মূর্তি,তম্রশাসন ইত্যাদি আরও অনেককিছু।

আনন্দ বিহার, কুমিল্লা - shajgoj.com

ধারণা করা হয় সপ্তম শতকের শেষ দিকে সমতটের রাজধানী ছিলো আনন্দ বিহার। কথিত আছে সপ্তম বা অষ্টম শতাব্দীর দিকে দেব রাজবংশের তৃতীয় শাসক শ্রী আনন্দ দেব এই আনন্দ বিহার নির্মাণ করেন। কিন্তু ১৯৪৩-৪৫ খৃষ্টাব্দে আনন্দ বিহার খননের জন্য কর্তৃপক্ষ চিন্তা ভাবনা করেন। তবে সেই খনন কাজ এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে। শুধুমাত্র মন্দিরের দক্ষিণ দিকটিই খনন করা হয়েছে। অধিকাংশ অংশে এখনও খনন কাজ অনেক বাকি। অসাধারন সৌন্দর্যে ঘেরা এই আকর্ষনীয় স্থানটিতে ঘুরে আসতে পারেন এতে ব্যস্থতাপূর্ণ লাইফে খানিকটা প্রশান্তি আসবে। পরিবার কিংবা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে দেখার জন্য খুবই সুন্দর এই স্থানটি

ময়নামতি জাদুঘর; ১৯৬৫ সালে স্থাপিত হয় ময়নামতি জাদুঘরটি। এটি কুমিল্লার কোটবাড়ি শালবন বিহারের উত্তর-দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। কুমিল্লার কোটিলা মুড়া, ইটাখোলা মুড়া, রুপবান মুড়া, চারপত্র মুড়া, আনন্দ বিহার, শ্রীভবদেবের মহাবিহার, রানীর বাংলা ও ভোজরাজার বাড়ি বিহার খননকালে অসংখ্য মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায়। মূলত এই সমস্ত নিদর্শন সংরক্ষণ ও প্রদর্শন এবং হাজার বছরের ইতিহাস এই একবিংশ শতাব্দীর মানুষের কাছে তুলে দিতেই এই জাদুঘর নির্মান করা হয়।ময়নামতি জাদুঘর, কুমিল্লা - shajgoj.com

এই জাদুঘরটি কুমিল্লা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে সালমানপুরে অবস্থিত। জাদুঘরটিতে ৪২টি ভিন্ন ভিন্ন সংরক্ষণাগারে কুমিল্লার বিভিন্ন স্থান থেকে সপ্তম এবং অষ্টম শতাব্দির বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে ব্রোঞ্চ, তামা, পোড়ামাটির ফলক, স্বর্ন ও রৌপ্যমুদ্রা, ব্রোঞ্চ ও পাথরের ছোট বড় মূর্তি, লোহার সামগ্রী এবং প্রাচীন হস্তলিপির পাণ্ডুলিপি উল্লেখযোগ্য।

আরো পড়ুন




ময়নামতি জাদুঘর সকাল ১০টা হতে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এটি রবি ও সোমবার ছাড়া সপ্তাহে বাকি পাঁচ দিন খোলা থাকে। সাধারণত এর প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা কিন্তু ৫ বছরের ছোট শিশুরা বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারবে। সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০০ টাকা এবং অন্যান্য সকল দেশের নাগরিকদের জন্য প্রবেশমূল্য ৫০০ টাকা। পুরোনো ঐতিহ্য এবং এর নিদর্শন উপভোগ করতে চাইলে অবশ্যই ঘুরে আসতে পারেন কুমিল্লার এই জাদুঘরটিতে।

কিভাবে যাবেন;

ঢাকা থেকে কুমিল্লা যাওয়ার জন্য বাস এবং ট্রেন এই দুটিই ব্যবহার করতে পারেন। বাসের মধ্যে এশিয়া লাইন, রয়েলকোচ, প্রিন্স, তৃষা এবং এশিয়া এয়ারকন রয়েছে। এদের মধ্যে এসি, নন এসি দুই ধরনের ব্যবস্থাই রয়েছে। এছাড়া চট্রগ্রাম-ফেনীগামী যেকোন বাস ব্যবহার করেও কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট পৌঁছানো যায়। ক্যান্টনমেন্ট পৌঁছে যেকোন অটোরিকশা কিংবা সিএনজি চড়ে কোটবাড়ির ভিতর দিয়ে পৌঁছাতে হবে।

কোথায় থাকবেন; থাকার জন্য কোটবাড়িতেই রয়েছে বিভিন্ন হোটেল এবং রেস্টহাউজ। কিন্তু এগুলা মানে বেশি ভালো নাও হতে পারে। তাই আপনি চাইলে কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত উন্নতমানের আবাসিক হোটেল ব্যবহার করতে পারেন।

কোথায় খাবেন; কোটবাড়িতেই রয়েছে উন্নতমানের বিভিন্ন খাবার হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট। চাইলে আপনি সেখানেই খেতে পারেন। তাছাড়া কুমিল্লা শহরেও অনেক ভালো ও উন্নতমানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সারাদিনের ঘুরাঘুরির পর চাইলে শহরে গিয়েও খেতে পারেন।এছাড়াও কুমিল্লার বিখ্যাত রসমালাই যেটি মনোহরপুরে অবস্থিত ‘মাতৃভান্ডারে’ পাবেন।  

শহুরের ক্লান্তিকর ও কোলাহল পূর্ণ জীবন থেকে কিছুটা মুক্তি পেতে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার অদূরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা শহরে। পুরোটা সপ্তাহের ক্লান্তি দূর করতে এর কোন জুরি নেই। 

                                                           ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন