Heart Health: হার্টকে সুস্থ রাখতে কী করবেন? হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

 হার্টকে সুস্থ রাখতে কী করবেন? হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো হৃদয় বা হার্ট। এটি প্রতি মুহূর্তে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে দেহের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ করে। কিন্তু আমাদের ব্যস্ত জীবনযাত্রা, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এবং স্ট্রেসের কারণে হার্টের সমস্যার ঝুঁকি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে হার্টকে সুস্থ রাখা সম্ভব।


১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন

হৃদযন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  • কম চর্বিযুক্ত খাবার খান: স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাট এড়িয়ে চলুন। এগুলো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • ফল ও শাকসবজি খান: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে তাজা ফল এবং শাকসবজি খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এগুলোতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার হার্টকে সুরক্ষিত রাখে।
  • মাছ ও বাদাম যোগ করুন: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ (যেমন—স্যামন, টুনা) এবং বাদাম হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো।
  • অতিরিক্ত লবণ ও চিনি এড়িয়ে চলুন: লবণ রক্তচাপ বাড়ায় এবং চিনি অতিরিক্ত ওজনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ।

২. নিয়মিত শরীরচর্চা করুন

হৃদযন্ত্রকে সক্রিয় এবং শক্তিশালী রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম অপরিহার্য।

  • হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন: সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন, দিনে ৩০ মিনিট হাঁটা, জগিং বা সাইক্লিং করার জন্য।
  • কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম: যেমন—দ্রুত হাঁটা, সাঁতার, যোগব্যায়াম হার্টের কার্যকারিতা উন্নত করে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা হার্টের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।

৩. ধূমপান এবং মদ্যপান ত্যাগ করুন

ধূমপান হৃদরোগের সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি। সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা রাসায়নিক পদার্থ ধমনীতে চর্বি জমাতে সাহায্য করে, যা রক্ত সঞ্চালনে বাধা সৃষ্টি করে।

  • ধূমপান পুরোপুরি বন্ধ করুন।
  • অতিরিক্ত মদ্যপান এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি রক্তচাপ বাড়ায় এবং হার্টের ক্ষতি করে।

যেসব ভিটামিনের অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে

স্বাস্থ্যকর উপায়ে ঘরোয়া খাবার খেয়ে দ্রুত ওজন বাড়ানোর ১০টি টিপস

শীতকালীন স্বাস্থ্য পরামর্শ,সর্দি-কাশি দূর করার প্রাকৃতিক এবং ঘরোয়া উপায়-

৪. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন

স্ট্রেস বা মানসিক চাপ হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে।

  • মেডিটেশন ও যোগব্যায়াম: মানসিক চাপ কমাতে যোগব্যায়াম এবং মেডিটেশন অত্যন্ত কার্যকর।
  • পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • নিজেকে সময় দিন: প্রিয় কাজ করুন, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান। এটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

৫. স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা আপনাকে হৃদরোগের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন রাখে।

  • রক্তচাপ মাপুন: উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের প্রধান কারণ।
  • কোলেস্টেরল পরীক্ষা করুন: কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন: ডায়াবেটিস হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, তাই এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

৬. পর্যাপ্ত পানি পান করুন

পর্যাপ্ত পানি পান করলে রক্তচলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।


৭. অ্যালার্মিং লক্ষণগুলো অবহেলা করবেন না

হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগের আগাম লক্ষণগুলোকে কখনো উপেক্ষা করবেন না। যেমন:

  • বুকে ব্যথা বা চাপ
  • শ্বাসকষ্ট
  • অস্বাভাবিক ঘাম
  • ক্লান্তি বা মাথা ঘোরা

এ ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

হার্টকে সুস্থ রাখা আমাদের জীবনযাত্রার ওপর নির্ভর করে। স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত শরীরচর্চা, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা—এগুলো মেনে চললে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের এই পরামর্শগুলো মেনে চলুন এবং আপনার হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখুন। জীবন একটাই, তাই নিজের যত্ন নিন এবং সুস্থ থাকুন।

লিখেছেন;  ফারজানা রহমান মুনমুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন