দাম্পত্য কলহ এড়িয়ে পরিবারের মানসিক পরিবেশে গুরুত্ব দেওয়া সকল পিতামাতার দায়িত্ব এবং আটটি উপায়

     দাম্পত্য কলহ সন্তানের মানসিক বিকাশে যেভাবে প্রভাব ফেলে

দাম্পত্য কলহ একটি পরিবারের মানসিক পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে সন্তানের মানসিক বিকাশে। সন্তানরা একটি নিরাপদ এবং স্নেহময় পরিবেশে বেড়ে ওঠার জন্য পরিবারের শান্তিপূর্ণ ও সমর্থনমূলক পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। দাম্পত্য কলহের কারণে সন্তানের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, তা নিম্নরূপ:

১. মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ বৃদ্ধি

দাম্পত্য কলহের ফলে সন্তানদের মধ্যে মানসিক চাপ ও উদ্বেগের মাত্রা বেড়ে যায়। তারা প্রায়শই নিজেদের অপরাধী মনে করতে পারে এবং পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য দায়ী ভাবতে পারে।


২. আত্মবিশ্বাসের অভাব

বারবার কলহের মধ্যে বড় হওয়া শিশুরা অনেক সময় নিজেদের অমূল্য ও অবহেলিত বোধ করতে পারে। এটি তাদের আত্মবিশ্বাস এবং আত্মসম্মান নষ্ট করতে পারে।


৩. আচরণগত সমস্যার সৃষ্টি

দাম্পত্য কলহের ফলে সন্তানদের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন:

  • রাগ প্রকাশে অদক্ষতা
  • অন্যদের প্রতি আক্রমণাত্মক বা নিন্দনীয় মনোভাব
  • স্কুলে মনোযোগের অভাব

৪. সম্পর্কের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি

যেসব শিশু ছোটবেলা থেকে দাম্পত্য কলহ দেখছে, তারা পরবর্তী জীবনে সম্পর্ক নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারে। তারা মনে করতে পারে সম্পর্ক মানেই ঝগড়া বা মনোমালিন্য।



৫. শিক্ষার উপর প্রভাব

কলহপূর্ণ পরিবেশের কারণে সন্তানরা তাদের শিক্ষার প্রতি মনোযোগ হারায়। বাড়ির পরিবেশে যদি অস্থিরতা থাকে, তাহলে শিশুর পক্ষে পড়াশোনার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা কঠিন হয়ে পড়ে।


৬. মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা

দীর্ঘমেয়াদি দাম্পত্য কলহের ফলে সন্তানদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন:

  • হতাশা
  • উদ্বেগজনিত ব্যাধি
  • সামাজিক বিচ্ছিন্নতা

৭. সমাজিক দক্ষতার অভাব

কলহপূর্ণ পরিবারে বেড়ে ওঠা শিশুরা অনেক সময় সুস্থ সামাজিক দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। তারা বন্ধু বা পরিবারের সাথে খোলামেলা মিশতে দ্বিধাগ্রস্ত হতে পারে।


৮. সহিংস আচরণের ঝুঁকি

দাম্পত্য কলহের চরম রূপ অর্থাৎ শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন দেখে বড় হওয়া শিশুরা ভবিষ্যতে সহিংস আচরণ করার ঝুঁকিতে থাকে। তারা এটি স্বাভাবিক আচরণ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে।


সমাধান ও পরামর্শ:

১. ঝগড়া সন্তানের সামনে করবেন না: সন্তানদের সামনে ঝগড়া থেকে বিরত থাকুন।
২. পরিবর্তনের উদ্যোগ নিন: পারিবারিক পরামর্শক বা থেরাপিস্টের সাহায্য নিতে পারেন।
৩. সন্তানের সাথে কথা বলুন: তাদের অনুভূতি জানুন এবং তাদের আশ্বস্ত করুন যে পরিস্থিতি তাদের দোষে হচ্ছে না।
৪. শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করুন: পরিবারের সবার প্রতি যত্নশীল এবং সহানুভূতিশীল হওয়ার চেষ্টা করুন।


শান্তিপূর্ণ ও সুরক্ষিত পারিবারিক পরিবেশ সন্তানের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দাম্পত্য কলহ এড়িয়ে তাদের সুস্থ, সুখী ও স্নেহময় পরিবেশ উপহার দেওয়া সকল পিতামাতার দায়িত্ব। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন