কুমিল্লার ঐতিহাসিক ৫টি দর্শনীয় স্থান এবং গাইড
কুমিল্লাকে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর বলা হয়। খাদি কাপড় ও রসমালাইয়ের জন্য বিখ্যাত কুমিল্লায় বেশ কিছু জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যা ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের আনন্দ দিতে পারে। জেলার তেমনই ৫টি স্থান নিয়ে এই প্রতিবেদন
১. শালবন বৌদ্ধ বিহার:
কুমিল্লা জেলার লালমাই-ময়নামতি প্রত্নস্থলের অসংখ্য প্রাচীন স্থাপনাগুলোর একটি শালবন বৌদ্ধ বিহার। নিরিবিলি ছায়াঘেরা শালবন বিহার ভ্রমণকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এটি বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন।
দেব বংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন। আকারে এটি চৌকো। শালবন বিহারের প্রতিটি বাহু ১৬৭.৭ মিটার দীর্ঘ। বিহারে সর্বমোট ১৫৫টি কক্ষ আছে। প্রতিটি কক্ষের দেয়ালে ৩টি করে কুলুঙ্গি রয়েছে যেখানে দেবদেবী ও তেলের প্রদীপ রাখা হতো। বৌদ্ধ বিহারের মধ্যভাগে মূল মন্দির, তার চারপাশে ছোট ছোট ১২টি মন্দির রয়েছে। ইতিহাস ও প্রকৃতি এই দুই মিলে কুমিল্লা শালবন বিহারে ভিন্ন এক আবহ তৈরি করেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ১০টি পর্বতশৃঙ্গের
চট্টগ্রাম শহরে ঘুরে দেখার মতো বেশ কিছু আকর্ষণীয় স্থান হলো
ছুটির দিনগুলোকে যেভাবে স্পেশাল করবেন
ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে অবস্থিত ওয়ার সিমেট্রি হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত সৈনিকদের সমাধিস্থল।১৯৩৯-১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত বিভিন্ন দেশের সৈনিকদের ৭৩৬টি কবর আছে এখানে।
সমাধি ক্ষেত্রটির প্রবেশ মুখে একটি তোরণ ঘর, যার ভিতরের দেয়ালে সমাধিক্ষেত্রের ইতিহাসের বিবরণ ইংরেজি ও বাংলা দুভাবেই লিপিবদ্ধ আছে। ভিতরে প্রবেশ করার জন্য রয়েছে প্রশস্ত পথ যার দুই পাশে সারি সারি কবর। প্রতি দুটি কবরের মাঝখানে একটি করে ফুল গাছ। সমাধিক্ষেত্রের সম্মুখে একটি ব্যতিক্রমী কবর রয়েছে যেখানে ২৩টি কবর দিয়ে একটি স্থানকে ঘিরে রাখা হয়েছে। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে সকল ধর্মের ধর্মগুরুদের সমন্বয়ে এখানে একটি বার্ষিক প্রার্থনাসভার আয়োজন করা হয়।
৩. বার্ড বা বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী:
এটি মূলত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ ও গবেষণার কাজ করে। এটি ১৯৫৯ সালে কুমিল্লা জেলার কোটবাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয়। বার্ড এর মূল পরিকল্পনাকারী ডা. আক্তার হামিদ খান। বার্ডের একাডেমিক বিভাগের অধীনে রয়েছে পল্লী প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার, পল্লী অর্থনীতি ও ব্যবস্থাপনা, পল্লী শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়ন, এবং কৃষি ও পরিবেশ।
প্রায় ১৫৬ একর জমি নিয়ে এটি গঠিত। বার্ড এর মধ্যে রয়েছে ট্রেনিং সেন্টার, বিশাল অডিটোরিয়াম, লাইব্রেরী, রেস্টুরেন্ট। সারাদিন ঘুরে বেড়ানো ও খেলাধুলার জন্য রয়েছে প্রচুর জায়গা। একটি বিশাল বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ ছোট ছোট পাহাড়ের গা ঘেঁষা নানা রকমের গাছপালা এখানে।
৪. ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্ক:
কুমিল্লা জেলার কোটবাড়ি এলাকায় অবস্থিত একটি বিনোদন কেন্দ্র। ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্ক যেন এক নতুন জগত। প্রবেশ মুখের গেট দেখে যে কেউ আনন্দিত হবেন, কারণ গেটটি বানানো হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় থিম বিদেশি কার্টুন ডিজনিল্যান্ডের আদলে।
সবুজ প্রকৃতি আর কৃত্রিমের ছোঁয়া একাকার পার্ক। প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বিশাল এক নাগরদোলা চোখে পড়বে। এছাড়াও পার্কে রয়েছে রেল, রোলার কোস্টারসহ শিশু-কিশোরদের নানা রাইড। ছোট পাহাড়ের উপর ৩টি ওয়াটার রাইড আছে যা যেকোনো মানুষকে খুব সহজে আকৃষ্ট করে। পাহাড়ের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই ডেকে উঠবে কৃত্রিম ডাইনোসরগুলো। এতো কিছুর মাঝে গানের তালে তালে এক আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয় পার্কটিতে।
৫. ধর্ম সাগর:
কুমিল্লা শহরে অবস্থিত ২৩.১৮ একরের একটি বিশাল জলধারা। ত্রিপুরা রাজ্যের অধিপতি মহারাজা ধর্মমাণিক্য ১৪৫৮ সালে এই দীঘিটি খনন করে। জনগণের পানীয় জলের সুবিধার জন্য খনন করে সবার জন্য উৎসর্গ করেন।
মহারাজা যে উদ্দেশ্যে ধর্মসাগর খনন করেছিলেন, তার সেই ব্যবহার এখন আর নেই। বিশাল এই দিঘী মানুষের পানির তৃষ্ণা না মিটিয়ে মনের তৃষ্ণা মিটিয়ে যাচ্ছে বহুবছর ধরে। তিন দিকে সবুজ প্রান্তর ঘেরা মাঝখানে ধূসর বর্ণের অন্যদিকে কুমিল্লা স্টেডিয়াম। প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের কাছে বিনোদনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে এটি।
নীলাচল | নীলের মায়ায় মিশে যেতে ঘুরে আসুন বান্দরবন 🌄
কুমিল্লা জেলার ঐতিহাসিক ২টি স্থান সম্পর্কে জানা আছে আপনার
ছুটির দিনে নদীর বুকে বৃষ্টি উপভোগ করতে চান
ট্রাভেলিং নিয়ে এট্রাক্টিভ কিছু ভাবা
কিভাবে যাবেন;
কোথায় থাকবেন; থাকার জন্য কোটবাড়িতেই রয়েছে বিভিন্ন হোটেল এবং রেস্টহাউজ। কিন্তু এগুলা মানে বেশি ভালো নাও হতে পারে। তাই আপনি চাইলে কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত উন্নতমানের আবাসিক হোটেল ব্যবহার করতে পারেন।
কোথায় খাবেন; কোটবাড়িতেই রয়েছে উন্নতমানের বিভিন্ন খাবার হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট। চাইলে আপনি সেখানেই খেতে পারেন। তাছাড়া কুমিল্লা শহরেও অনেক ভালো ও উন্নতমানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সারাদিনের ঘুরাঘুরির পর চাইলে শহরে গিয়েও খেতে পারেন। এছাড়াও কুমিল্লার বিখ্যাত রসমালাই যেটি মনোহরপুরে অবস্থিত ‘মাতৃভান্ডারে’ পাবেন।
শহুরের ক্লান্তিকর ও কোলাহল পূর্ণ জীবন থেকে কিছুটা মুক্তি পেতে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার অদূরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা শহরে। পুরোটা সপ্তাহের ক্লান্তি দূর করতে এর কোন জুরি নেই।
আশা করি আপনারা তথ্যের মাধ্যমে উপকৃত হবেন,ব্লগটি ভালো লাগলে আমার youtube BD Glamour World থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।