লাইলাতুল কদরের রহস্য: কোন রাতে ইবাদত করলে সর্বোচ্চ সওয়াব পাবেন?

  লাইলাতুল কদরের রহস্য: কোন রাতে ইবাদত করলে সর্বোচ্চ সওয়াব পাবেন?

লাইলাতুল কদর, অর্থাৎ "সম্মানিত ও বরকতময় রাত," ইসলামে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি রাত। এটি এমন একটি রাত, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এই রাতে কুরআন মাজিদ নাজিল হয়েছে এবং আল্লাহর অশেষ রহমত ও মাগফিরাত বর্ষিত হয়। কিন্তু লাইলাতুল কদর ঠিক কোন রাতে হয়, তা নিয়ে এক রহস্য রয়েছে।


কোন রাতে লাইলাতুল কদর হয়?

লাইলাতুল কদরের সঠিক তারিখ সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা নেই। তবে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে (২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯তম রাত) শবে কদর তালাশ করতে।

📖 হাদিসে এসেছে:
❝তোমরা লাইলাতুল কদরকে রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে অনুসন্ধান করো।❞ (সহিহ বুখারি: ২০১৭, সহিহ মুসলিম: ১১৬৯)

২৭ রমজান সবচেয়ে সম্ভাব্য?
বেশিরভাগ ইসলামিক স্কলার ও সাহাবাগণ মনে করেন যে, ২৭ রমজানের রাতেই শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যদিও অন্য রাতেও হতে পারে, তাই শেষ দশকের সব বেজোড় রাতে ইবাদত করা উচিত।


আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার শক্তিশালী দিকনির্দেশনা ও কুরআনের প্রাসঙ্গিক আয়াত

আদর্শ পরিবার গঠনে আল কুরআনের ভূমিকা

কেন লাইলাতুল কদরের ইবাদত এত গুরুত্বপূর্ণ?

১. হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রাত:

📖 আল্লাহ বলেন:
❝লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।❞ (সুরা কদর: ৩)

  • এই রাতের ইবাদত করলে ৮৩ বছর ৪ মাসের ইবাদতের সমান সওয়াব লাভ করা যায়!
২. গুনাহ মাফের সুবর্ণ সুযোগ:

📖 রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
❝যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে নামাজ পড়ে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।❞ (সহিহ বুখারি: ১৯০১, সহিহ মুসলিম: ৭৬০)

৩. ফেরেশতারা পৃথিবীতে আগমন করেন:

📖 আল্লাহ বলেন:
❝এই রাতে ফেরেশতারা ও রুহ (জিবরাইল) আল্লাহর নির্দেশক্রমে অবতরণ করেন।❞ (সুরা কদর: ৪)

  • এই রাতে ফেরেশতারা পৃথিবীতে নেমে আসেন এবং আল্লাহর বান্দাদের জন্য শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করেন।
৪. এক বছরের ভাগ্য নির্ধারিত হয়:

📖 আল্লাহ বলেন:
❝এই রাতে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ফায়সালা করা হয়।❞ (সুরা আদ-দোখান: ৪-৫)

  • আল্লাহ এই রাতে মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করেন এবং তার পরবর্তী বছরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

লাইলাতুল কদরের রাতে করণীয় আমল

নামাজ: বেশি বেশি নফল নামাজ পড়ুন, অন্তত ২ রাকাত করে।
দোয়া: রাসুলুল্লাহ (সা.) শিখিয়েছেন—
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
"হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসো, তাই আমাকে ক্ষমা করো।" (তিরমিজি: ৩৫১৩)
কুরআন তিলাওয়াত: যত বেশি সম্ভব কুরআন পড়ুন।
সালাতুত তাসবিহ: বিশেষ নফল নামাজ যা অনেক ফজিলতপূর্ণ।
সদকা ও দান: এই রাতে দান-সদকা করলে হাজার মাস দান করার সমান সওয়াব পাওয়া যায়।

লাইলাতুল কদর এক রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের রাত। যদিও নির্দিষ্ট তারিখ অজানা, তবুও রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে ইবাদতে মগ্ন থাকা উচিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই রাতের ফজিলত অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন!

ইসলামে ফরজ গোসলের বিস্তারিত নিয়ম এবং পদ্ধতি সম্পর্কে যা বলা হয়েছে 🌿

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন