কুরআন তিলাওয়াতের সঠিক নিয়ম

                       কুরআন তিলাওয়াতের সঠিক নিয়ম

কুরআন মহান আল্লাহর বাণী, যা মানুষের জন্য জীবন পরিচালনার একটি পূর্ণাঙ্গ পথনির্দেশিকা। এটি তিলাওয়াত করার সময় কিছু নিয়ম ও আদব (শিষ্টাচার) অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিকভাবে কুরআন তিলাওয়াত করা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই নয়, বরং এটি আমাদের আত্মার প্রশান্তি এবং জীবনের পথনির্দেশনা লাভের উপায়।

কুরআন তিলাওয়াতের শিষ্টাচার

১. পবিত্রতা রক্ষা করা
কুরআন তিলাওয়াতের পূর্বে ওজু করা আবশ্যক। আল্লাহ বলেন:

“এটি সম্মানিত এক কিতাব, যা স্পর্শ করবে না, কিন্তু পবিত্ররা।” (সূরা ওয়াকিয়া: ৭৯)
তাই শারীরিক ও স্থানীয় পবিত্রতা বজায় রাখা তিলাওয়াতের জন্য অপরিহার্য।

২. ইখলাস বা আন্তরিকতা
তিলাওয়াতের উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হওয়া উচিত। এতে কোনো প্রকার রিয়া বা লোক দেখানোর প্রবণতা থাকা অনুচিত।

৩. কিবলামুখী হওয়া
তিলাওয়াত করার সময় কিবলামুখী হওয়া উত্তম, যদিও এটি বাধ্যতামূলক নয়। এটি তিলাওয়াতের প্রতি শ্রদ্ধার একটি বহিঃপ্রকাশ।

৪. আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ পাঠ করা
তিলাওয়াত শুরুর আগে বলতে হবে:

“আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রজীম”
এরপর সূরা শুরুর সময় বলতে হবে:
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”

ইসলামের স্তম্ভ কয়টি ও কী কী? ইসলামের ইতিহাস এবং উত্থান

বিপদে আল্লাহর সাহায্য লাভের জন্য এই দোয়াগুলো পড়ুন

ইসলামে ফরজ গোসলের বিস্তারিত নিয়ম এবং পদ্ধতি সম্পর্কে যা বলা হয়েছে 🌿

৫. সঠিক উচ্চারণ এবং তাজবীদ অনুসরণ করা
কুরআনের আয়াত সঠিক উচ্চারণে এবং তাজবীদের নিয়ম মেনে তিলাওয়াত করা অত্যন্ত জরুরি। ভুল উচ্চারণে আয়াতের অর্থ পরিবর্তিত হতে পারে। নবী করিম (সা.) বলেন:

“তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে কুরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।” (বুখারি)

তিলাওয়াতের নিয়মাবলি

১. তিলাওয়াত ধীরে ধীরে করা
কুরআন তাড়াহুড়ো করে নয়, বরং ধীরে ধীরে, অর্থ বোঝার চেষ্টা করে তিলাওয়াত করতে হবে। আল্লাহ বলেন:

“কুরআন ধীরে ধীরে স্পষ্টভাবে তিলাওয়াত কর।” (সূরা মুজাম্মিল: ৪)

২. অর্থ বোঝার চেষ্টা করা
কুরআন তিলাওয়াতের সময় তার অর্থ ও মর্মার্থ বোঝার চেষ্টা করা উচিত। এটি তিলাওয়াতকে অর্থবহ করে তোলে এবং আল্লাহর বাণীর গভীর তাৎপর্য হৃদয়ঙ্গম করতে সাহায্য করে।

৩. তাওবা এবং দোয়া করা
তিলাওয়াতের সময় যখন জান্নাত বা রহমতের বর্ণনা আসে, তখন আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং জাহান্নাম বা শাস্তির বর্ণনা এলে তাঁর কাছে আশ্রয় চাওয়া সুন্নত।

৪. তিলাওয়াতের সময় আবেগপ্রবণ হওয়া
কুরআনের আয়াত হৃদয়ে গভীরভাবে অনুভব করা এবং তা অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানানো উত্তম। নবী করিম (সা.) প্রায়ই তিলাওয়াত করতে গিয়ে কেঁদে ফেলতেন।

তিলাওয়াতের উপকারিতা

১. আত্মার প্রশান্তি
কুরআন তিলাওয়াত মনকে শান্ত করে এবং জীবনের উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা দূর করে।

“জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই অন্তর শান্তি পায়।” (সূরা রা’দ: ২৮)

২. সওয়াব বৃদ্ধি
কুরআনের প্রতিটি অক্ষরের জন্য সওয়াব রয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেন:

“কুরআনের প্রতিটি অক্ষর পাঠ করার জন্য এক সওয়াব, আর এক সওয়াব দশগুণ বৃদ্ধি পায়।” (তিরমিজি)

৩. আখিরাতের সুপারিশকারী
কুরআন তার পাঠকদের জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে।

“পড়ো কুরআন; কিয়ামতের দিন এটি তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হবে।” (মুসলিম)

কুরআন তিলাওয়াত একটি পবিত্র ইবাদত এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। সঠিক নিয়ম মেনে তিলাওয়াত করলে তা আমাদের হৃদয়কে শুদ্ধ করে, জীবনে সঠিক পথ দেখায় এবং আখিরাতে সাফল্য নিশ্চিত করে। তাই কুরআনের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রেখে আমরা যেন তিলাওয়াতের সময় সব নিয়ম মেনে চলি এবং এর নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালিত করি।

নারীর রূপচর্চা ও ইসলামের নির্দেশনা

প্রাকটিসের মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্য বিকশিত হয়

সুস্থ ঘুমের জন্য ইসলামের পরামর্শ: রাতে ঘুমানোর আদব। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন