ইসলামী শিষ্টাচার: ঘরে ও বাহিরে সঠিক আচরণের আদব কায়দা
ইসলামে শিষ্টাচার বা আদব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিটি কাজ ও আচরণের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঘরে ও বাহিরে সঠিকভাবে আচরণ করা একজন মুসলিমের দায়িত্ব, এবং এতে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও ধর্মীয় উন্নতি সাধন হয়। নিচে ঘরে ও বাহিরে সঠিক আচরণের কিছু ইসলামী শিষ্টাচার তুলে ধরা হলো:
ঘরের মধ্যে শিষ্টাচার (আদব):
১. সালাম দেওয়া:
- ঘরে প্রবেশ করার সময় পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্যে সালাম দেওয়া সুন্নত। এটি পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি করে।
- সালামের উত্তর দেওয়া বাধ্যতামূলক (ওয়াজিব)।
২. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:
- ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ইসলামী আদবের অংশ। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, "পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ।"
- নিজের পোশাক এবং বসবাসের স্থান পরিষ্কার রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
৩. পরিবারের সঙ্গে সদাচরণ:
- পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা ইসলামের মূলনীতি। বিশেষত, বাবা-মা এবং সন্তানদের সঙ্গে সম্মান ও ভালোবাসার সঙ্গে আচরণ করতে হবে।
- নবী (সা.) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার পরিবারের জন্য উত্তম।”
৪. অপচয় থেকে বিরত থাকা:
- খাবার, পানি বা অন্য কোনো সম্পদ অপচয় করা ইসলামে নিষেধ। প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত।
৫. খাওয়ার শিষ্টাচার:
- ডান হাতে খাওয়া, খাবারের আগে ও পরে হাত ধোয়া, খাবার খাওয়ার সময় আল্লাহর নাম নেওয়া (বিসমিল্লাহ) এবং খাবার শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা আদবের অংশ।
- খাবার নষ্ট না করা এবং ক্ষুধার্তদের মাঝে বিতরণ করা ইসলামের সুপারিশকৃত আদব।
৬. অধিকার ও দায়িত্ব পালন:
- পরিবারের সদস্যদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং তাদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করা উচিত।
- পারস্পরিক দায়িত্বশীলতা পালন করা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা।
বাহিরে শিষ্টাচার (আদব):
১. অন্যকে সম্মান করা:
- বাহিরে কারও সঙ্গে দেখা হলে সালাম দেওয়া ও সৌজন্যতা বজায় রাখা উচিত। ইসলামে অন্যের প্রতি সম্মান দেখানো খুব গুরুত্বপূর্ণ।
- অহংকার করা ইসলামে নিষিদ্ধ, তাই বিনম্রভাবে আচরণ করতে হবে।
2. পথচলার শিষ্টাচার:
- পথচারীদের বিরক্ত না করা এবং রাস্তা বা পথ পরিষ্কার রাখা ইসলামের সুন্নত। নবী (সা.) বলেছেন, “পথ থেকে কষ্টদায়ক কিছু সরিয়ে দেওয়া ইমানের একটি অংশ।”
- মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলা এবং অন্যের পথ রোধ না করা উচিত।
৩. প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ:
- প্রতিবেশীর অধিকার ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বলা হয়েছে। নবী (সা.) বলেছেন, “তুমি তোমার প্রতিবেশীর জন্য যা ভালো মনে করো, সেটাই তার জন্য করবে।”
- প্রতিবেশীদের কষ্ট দেওয়া বা তাদের ব্যাপারে অসচেতন থাকা ইসলামে নিষেধ।
৪. সততা ও ন্যায়পরায়ণতা:
- কোনো কাজ বা বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সততা বজায় রাখা জরুরি। প্রতারণা বা ধোঁকা দেওয়া ইসলামে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
- ন্যায়পরায়ণভাবে কাজ করা এবং অন্যের প্রতি সুবিচার করা ইসলামের অন্যতম আদব।
৫. দুর্বলদের সাহায্য করা:
- যে কোনো দুর্বল, অসহায় বা বয়স্ক মানুষকে সাহায্য করা ইসলামের অন্যতম মূলনীতি। নবী (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করবেন না।”
৬. সর্বদা মৃদুভাষী হওয়া:
- অন্যের সঙ্গে কথা বলার সময় সদাচরণ ও বিনম্রতা দেখানো উচিত। গালাগালি বা রুক্ষ ভাষায় কথা বলা ইসলামে নিষিদ্ধ।
- কুরআনেও আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “তোমরা মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বল।”
৭. আচরণে নম্রতা ও শালীনতা বজায় রাখা:
- বাহিরে চলাফেরা ও আচার-আচরণে শালীনতা বজায় রাখা ইসলামের নির্দেশ। পোশাক, আচরণ, এবং ব্যবহারে নম্রতা ও শালীনতা দেখানো উচিত।
৮. শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা:
- মুসলিমদের আচরণের মাধ্যমে সর্বদা শান্তি এবং নিরাপত্তা ছড়িয়ে দিতে হবে। ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং মুসলিমদের দায়িত্ব হলো যে কোনও পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ আচরণ বজায় রাখা।
ইসলামে এই শিষ্টাচারগুলো একজন মুসলিমের ব্যক্তিত্ব গঠনে সহায়তা করে, এবং এটি পরিবার, সমাজ ও মানুষের মধ্যে শান্তি, ভালোবাসা ও সম্মানের পরিবেশ বজায় রাখে।
Tags
ইসলামিক